যা হারিয়ে যায়
যা হারিয়ে যায় তার সব বুঝি আগলে
রাখা বড় শক্ত কাজ, যেদিন শৈশব হারিয়েছি
তারুণ্যের স্ফুর্তিতে অমূল্য এ রতন ফেলে,
আনন্দে মশগুল দিনগুলো সব কাটিয়েছি
মাতাল সমুদ্রের এক একটা উত্তাল ঢেউ-এর মতন।
যৌবনে সংসার পেতেছি আর পাঁচজন যেমন পাতে,
সময় যেন ঘোড়দৌড়ের ঘোড়া। হাসি আহ্লাদে সযতন
কেটে গেল পিতা, মাতা, স্ত্রী-পুত্র- কন্যাদের সাথে।
একুশটা বছর আমার এ সংসারের ধরেছিলে হাল
হঠাৎ উল্কার মতন আমার আকাশ থেকে গেলে ঝরে,
সে অন্ধকার রাত শেষে সূর্য তার আলোকিত পাল
যথারীতি তুলেছিল আমার নীরব এই ধরার পরে।
তবে এ হারানোর ব্যথা চিরন্তন, অনন্ত, অসীম,
আগলে রেখেছি তোমার সে ক্ষীণ ম্লানচ্ছায়া স্মৃতি,
ধীরে ধীরে নিভে গেল বাতি, এল মৃত্যু সে অন্তিম
মনে রয়ে গেল বাকি সব কথা, যত প্রেম ভালবাসা প্রীতি।
আমি সেই থেকে একা, একা তুমি চলে গেলে ফেলে
এ শূন্য সংসার, তুমি গড়েছিলে যারে প্রাণ ঢেলে।।
অষ্টমী, ২৪/১০/২০২০
=================================================
স্মৃতিপালনের সুখ
মহা ধূম্রসাগরে ডুবে থাকতে হলেও
প্রাণ সংশয় তত বিরাট আকার করে না ধারণ;
তবে হারানোর ব্যথা অহল্যা স্থবির,
অনড় প্রাণহীন ফসিল। বিব্রত আজ কবি অকারণ।
বজ্রাহত স্মৃতিভস্ম যেন নড়েচড়ে বসে
কলেবরে তার লেখা থাকে সেদিনের যুদ্ধ ইতিহাস,
যাপনের দিনপঞ্জী পালন যেমন তেমন
এসময় শুধু টেনে ধরে আনন্দোৎসবের রাশ।
সার্ধেক বছরকাল কেটে গেল সময় সন্তরণে
একাকীত্বের চোরা স্রোতে, ঊষর বালির মরুভূমে
অভিমানে, অপমানে, কত মিথ্যা অবদানে -
তুমিও শান্তি পেলে না বুঝি অকাল এ কালঘুমে!
==========================================
আজ সেই দিন
দিনের আসা যাওয়া নিয়ম
তবু এক একটা দিন
মনে ফিরে ফিরে আসে -
কোন এক আনন্দক্ষনে জন্ম
কোন এক পালনের দিন,
ঠিক যেমন তোমারই জন্মদিন।
তারা অতীত গুপ্তধন- স্মৃতির
সযত্নে সাজিয়ে রাখা চিরন্তন
আজ যেমন মেলে ধরে পাতা
জীবনের খাতায় লিখে রাখা
যা ছিল আনন্দ তোমার আমার
সময়ের কালচক্রে আজ কেন সে
বেদনা আনে, তবু মনে আসে
আজ সেই দিন – তোমারই জন্মদিন।
অজানা অবস্থানে রয়েছ আড়ালে
একটু খুশি তবু যদি পাঠালে তোমায়,
ভাল থাকো, মনে পড়ে ফেলে যাওয়া
অতীত তোমার, শত ব্যথা, কষ্ট স্বীকার
খুশি মনে তোমায় জানাই
আমার এমন এক স্মৃতিচারণ!
স্মৃতার্ঘ
জগতের নিত্য ক্ষয়ের মাঝে
বিলুপ্তির হিসাব করি নি কোনদিন -
ডাইনোসরের সময়
আদি মানবের সময়
সভ্যতার প্রাচীন দেওয়াল লিপি
সবই আজ লুপ্ত।
সুপ্ত সব, শুধুই প্রাগৈতিহাসিক
ফেলে আসা চিহ্ন আখরে।
আমিও বদলে গেছি কত
চলেছি যত, তত পথ বদলেছে
নিত্য যাত্রাপথে। প্রাপ্তিরা সবাই প্রাপ্তবয়স্ক,
আর যত ক্ষয়-ক্ষতির খতিয়ান
সমাধির তলে আছে চাপা, ঘুমিয়ে আছে ওরা।
সেই নির্জনতা আত্মস্থ করে আমায়
গভীর থেকে আরও গভীরে
মগ্নতা থেকে নিমগ্নতায়।
স্মৃতিরা নির্বাকযুগের চলচিত্র হয়ে
যেখানে জীবন্ত হয়ে ওঠে
অতীতের অল্পস্বল্প খুশি আনন্দ সুখ
সব দেখি জীবনের ক্ষয়াটে দলিল -
সেখানে ফিরে আসি দুঃখবিলাসের
মজলিস বসাতে নয়, ফিরে ফিরে আসি
রোমন্থনের অপার সমুদ্রস্নানে।
এমনই এক ফিরে দেখা
এমনই এক শব্দজাল বোনা -
উপলব্ধিকে আমার উপভোগ্য করে তোলে
সেই সব স্মৃতি-সমাধি আমাকে সম্বৃদ্ধ করে
আনন্দ পরিচয়ে, চিরন্তন ভালবাসায়।
তাই আজ এসেছি আবার ফিরে
পুরোনো সেই জরাজীর্ণ মন্দিরে
যেখানে বেদনার ব্যথিত বাদন
আজও বাজে মনের প্রত্যন্ত কোণে -
সেও বুঝি দিন গোণে
আমার এই ফিরে ফিরে আসার।
১৭/১০/২০১৮ (মহাষ্ঠমী)
========================================
কার মিলন চাও বিরহী...
মৃত্যু জানি মুক্তির ছদ্মনাম
অপার আনন্দলোক,
সে এক আলোক-আনন্দধাম।
মৃত্যু নাকি সব দুঃখ-সুখের,
সব নাম যশ মহিমার ঊর্ধ্বে -
এমনই সে মহীয়ান।
কিন্তু যে থাকে প্রতীক্ষায়
যার এখনও হয়নি সময়,
মৃত্যু যখন অসময়ে আসে -
প্রিয়জনে নিয়ে চলে যায়
হঠাৎ হেলায়,
সঙ্গহানি ঘটায় সে বিপর্যয়।
তাই আজ এ অতীত মিলন ক্ষণে
তোমার হঠাৎ চলে যাওয়া
অকাল বিচ্ছেদ ব্যথা,
পালনের কালে যেন আরও বেশি
ভেসে আসে মনে।
জ্বালাময় মারণ ব্যাধির দরবারে
কোন আবদার, অনুনয়-বিনয়-
শুধুই অর্থহীন সময় অপচয়।
অনন্তপথে যে যাত্রী যাবার সে যায়,
একরাশ শোক পিছে রেখে
চলে যায় সুদূর পরপারে।
আজি শুভদিনে
তুমি তো সেই পরমাত্মা
অদৃশ্য অশরীরী
অন্তরালের অন্তরাত্মা -
তবে এখনও কি প্রত্যাশা কর
মর্তের শুভেচ্ছা যত উচ্চারিত বাণী
পৌঁছাবে সেই দিগশূণ্যপুরে?
শুভ হোক তোমার অধুনা যাপন -
জানা নেই কোন অবয়বে আছ বেঁচে
নয়তো বা শূণ্যের চেয়ে আরও শূণ্যতার মাঝে,
অজানা কোন অবস্থান –ঠিকানাহীন
এক উপস্থিতি তোমার।
তবু বিশ্বাসেও নয়, অবিশ্বাসেও নয়
মনে পড়ে যায় – আজকের দিনটা ছিল
আনন্দ পালনের এক খুশির যাপন।
বড় কষ্টের হলেও সযত্নে আবার জানাই
ভালবাসা এই শুভদিনে।
কষ্ট পেতে নেই আজ
তাই আবার বলি – ভাল থেকো।
- গৌতম সেন
21 July, 2018
উদ্যাপন
আজ কিছু কথা। কিছু হারানো দিন। কিছু স্মৃতির খাতায় একাকী ভ্রমণ। উৎসবের ঝলমলে বাতাস ভারী অতীতকে বয়ে চলে চুপিসারে। ঢাকের শব্দ, ডাকের সাজ, মণ্ডপে মণ্ডপে আপামর বাঙালির বাৎসরিক আনন্দ সমাবেশ – খুশির জমায়েত। সেদিনও ছিল, আজও আছে। তফাৎ শুধু তুমি নিজে গড়ে দিয়ে গেলে, চলে গিয়ে শারদোৎসবের জমজমাট আসর ছেড়ে, চিরতরে অনন্তের অচিন তেপান্তরে।
গুণে গুণে চোদ্দটা অষ্টমী পার হ’ল নিষ্ঠুর এক ব্যথার আসর সাজিয়ে। ভেবেছিলাম পুজোর আনন্দের মাঝে নিজেকে বিলীন করে দেব, সময়ের পলেস্তারা প্রলেপে। না সম্ভব হ’ল না, হবেও না কোনদিন, এতদিনে বেশ বুঝে গেছি। কানে আসে পুরোহিতের উচ্চস্বরে পুষ্পাঞ্জলির মন্ত্রোচ্চারণ, মনে আসে ফিরে ফিরে সেদিনের সে অনন্তযাত্রা তোমার। শরতের মিঠে রোদে পথে পথে উৎসবের চিহ্ন ছড়ানো, কচিকাঁচাদের খুশির জয়যাত্রা। আনন্দ মিছিল। আমার মনের মণ্ডপে তবু আজ কেবলই ঝরে পড়া কেয়া ফুলের বিগত সুবাস, নীরব শোকের অনারম্বর, মন্ত্রহীন সে পুষ্পাঞ্জলি। দেবীজ্ঞানে নয়, অতি প্রিয় সঙ্গী এক মানবীর পুজো সারি আমি আজও।
বিধাতার কারসাজি ঘুণাক্ষরে টের না পেলেও সেদিন, আজ এতদিন পরে বলতে দ্বিধা নেই আমার জীবনের পথে এ অমোঘ ষড়যন্ত্র তাঁর চরম এক রসিকতা। তাই আজও ফি-বছর এই অষ্টমী দিনে ফিরে ফিরে আস তুমি উজ্জ্বল স্মৃতিচারণে, শুধু শোকে নয়, এক অলীক আনন্দলোকে ডেকে আনি তোমায়, কিছুটা সময় কাটাই ঘনিষ্ট অতীতের নিবিড়তা মাঝে। ইথারের মাঝে যদি অন্তরাল খুঁজে বসবাস করো, যদি এখনও মনে পড়ে ফেলে যাওয়া তোমার আপনজনের কথা, তবে ব্যথা নয় শুধু, শক্তি জুগিয়ে যেও বাকিদের বাকিদিনের পথচলার পথে। আর যদি কোথাও তোমার অস্তিত্ব খুঁজে না পায় আমার এ বাণী – তবে স্মৃতিতে রয়ে গেছে যে আনন্দমুর্তি তোমার, তাঁরই হোক পুজা এ বাৎসরিক ক্ষণে, আবার, বারেবার আজ এই অষ্টমীর দিনে।
শুভ জন্মদিন
অন্তরের মর্মবাণী তোলে প্রতিধ্বনি প্রতিনিয়ত
তারই কিছু শব্দ আজ এই শুভ দিনে উচ্চারিত
হোক অতীতের সেই সুখস্মৃতি ক্ষণে !
২১শে জুলাই, ২০১৭
শুভ সে অতীত দিন
তোমার আমার পাশে থাকা
যেদিন থেকে স্মৃতির ইতিহাস হয়ে গেল
উপহারে ভরিয়ে দেওয়া কিছু কিছু বিশেষ দিন
কিছু কিছু বিশেষ আনন্দক্ষণ।
সাথে ক’রে নিয়ে গেলে তাদের
হঠাত ক’রে হারিয়ে গেলে যেদিন।
আজ তেমনই একটা দিন -
শুভ জন্মদিন। একুশে জুলাই। দু-হাজার সতেরো।
কতদিন আর আগে, বলো?
মাত্র দশক ষাট আগে-
আলো দেখেছিলে প্রথম সেদিন
আনন্দে ভরেছিল তোমার পরিবার।
সেদিন ই লেখা হয়ে গেছিল বিধিলিপি
তোমার আমার সংক্ষিপ্ত পথ চলা পঞ্চালী।
শব্দরা তরঙ্গ।
তোমার সঙ্গে যোগাযোগ, যা কিছু যতটুকু সঙ্গ
সে শুধু আজ ওই তরঙ্গপথ। শব্দতরঙ্গ।
তাই লিখে পাঠালাম জন্মদিনের সওগাত
এই শব্দগুঞ্জনে। না পাওয়ার এই পুনঃক্ষণে
বিষাদের প্রতিধ্বনি মাখা নীরব অনুরণনে।
২১শে জুলাই, ২০১৭
_____________________________________________
সল্পায়ু বন্ধন
আয়ু পথে যতি চিহ্ন আঁকা হল
দ্বাদশ শারদবর্ষ আগে মহাষ্টমী সকালে -
সব কিছু পিছনে ফেলে নিছকই অকালে।
স্মৃতিকে উসকে দিল সে অকাল প্রয়াণ
আজ আবার উৎসব পঞ্চপ্রদীপের শিখা
স্মরণে তে টেনে আনে সে চিতা শয়ান।
সে অসময় প্রবল দুঃসময়ের বার্তা নিয়ে
এনেছিল আমার এ ঘরে দীপ নেভা
অনর্থক দূর্গা বিসর্জন -
সংসার আঙিনায়
আজও এ উৎসব ফিরে ফিরে আসে।
আলপনা আঁকা হয় বিষাদের রঙে
সময় পারে নি দিতে আজও কোনও ক্ষতিপূরণ ।
অন্যায্য ক্ষতি আজও ক্ষত হয়ে খোঁজে নিরাময়-
অলক্ষ্যে নিয়তি জানায় সে নেহাতই নিরুপায়।
স্মৃতিচারণ
জড়ায়ে ছিলে জীবনে জীবন সম
জন্মলগ্নে আনন্দ উপকর্ষে
জনক-জননী, স্বজন সমূহ হরষে।
দিন এল যবে, আপন গৃহ ছাড়িয়া
বসত রচিলে আমাতে –
সেই দিন হ’তে তুমি আমারই উদযাপন
বরষে বরষে আজি এ পূণ্যদিবসে।
জিজ্ঞাসি যদি তোমারে - স্তব্ধতা ঘেরি
বঞ্চিলে কেন মধুর এ সম্পাদনে,
ত্যাজিলে আমায় কোন মহাশূণ্যতা মাঝে
ভরিতে জীবন স্মৃতির শঙ্খনাদে ?
হারায়ে তোমারে জীবন মধ্যগগনে
তুমি আছ কোন একাকীত্ব-সাগরে
অনতিলঙ্ঘ গোপন অবগুন্ঠনে –
সেই হ’তে চলি আমি যাপনের পথে,
হৃদপাথরের গাত্রে লিখেছি তোমারই নাম,
লিখেছি ধাবিত সময় প্রাকারে।
জাগতিক সীমা ছাড়ায়ে বিরাজিছ তুমি যেথা
ভালবাসা খুশি থেকো আজি তেমনই পূর্বাপর,
দৃষ্টি বিনত হোক অধোমুখে ওই শান্তি পারাবার হ’তে-
দেখ চাহি এ জন্মদিন উদযাপন,
স্মৃতিচারন শুভ এই দিবসেতে আজি পূনর্বার।
21/07/2015
Remembrance
An entity of engagement in my life -
You on earth proved to be a joyous bearth
For your mother, for your father and others.
The day you changed your place,
Started to reside in me -
From that day, you remained my celebration –
Every year this glorious day.
Tell me now why did you stop and
Debarred me from this sweetest deal,
Why did you leave me deserted to feel void
And to fill alone with memories alive.
I lost you so soon, almost at noon of our time
You’re in an ocean of loneliness
with occult presence -
While I thribe, I inscribe your name
On the edges of the stones
On age’s wall of time.
Beyond all mundane sights where you reign -
Be happy my love, as you’re used to be
From your peaceful abode look beneath
Our remembrance today you do have to see.
II
Every time I remember the immense loss -
the gloss of my life that you took away from me;
A feeling of an irrevocable damage floats up.
Days go by; my life gaining age every day
and your forced separation too
causing a sore within without heal,
kept me roving on a lone shore of the life’s ocean.
Yet those days come that called for celebration,
but your not being with us
changed the calibration of my life altogether,
like an orchestra missing its tuning lacking harmony.
Remembrance instigates, impels me to reach back
those moments of sprinkled jubilation and delight.
I fight within, cry within too, but you’re lost forever,
leaving a captivating memory on earth,
my only sweet possession.
Today – a day I ought to pour my wishes
wherever it may have to reach,
but be there where you are.
Gather the blossoms of warm wishes -
the fragrance of my feelings on your Birthday.
Those who are gone, far away from home,
Know not where do they stay-
but I know my wishes with wings
would alight on your land of rest and peace.
Be your soul happy again with
the gleams of a heavenly bliss!